ক্যাসেল হিল থেকে টাইমস স্কোয়ারে যেতে আমার সময় লাগে ৪৫ মিনিটস।
আমি সাবওয়েতে উঠেই ফেসবুকে অন্যদের স্ট্যাটাসগুলি দেখি। সেখানে কমেন্ট করি। আমি সাবওয়েতে থাকলে ইংলিশে কমেন্ট করি। অন্যথায় বাংলা ব্যবহার করি।
আবার ফেরার পথেও এই একই কাজটা করি। অর্থাৎ সারাদিনে আমি প্রায় ঘড়ি ধরে দেড় ঘন্টা ফেসবুকে অন্যদের স্ট্যাটাসগুলি পড়ি।
বাকীটা সময় ফেসবুকে দিই নিজের লেখা ও বিভিন্ন কমেন্টের এনসার এর জন্য।
আজও সাবওয়ে সিক্স ট্রেনে বাসায় ফিরছিলাম।
হঠাৎ একটা নিউজ দেখলাম অনেকেই শেয়ার দিচ্ছে।
নিউজটা ছিল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লিভ-টুগেদার’ বাতিল করতে যাচ্ছেন।
নিউজের হেডলাইন দেখেই আমি হাসলাম।
অনেকক্ষন সময় নিয়ে-ই হাসলাম।
বেশ কয়েকটা পত্রিকাতে এই নিউজটি দেখা যাবে।
বাংলাদেশের প্রথম আলো বা কোলকাতার আনন্দবাজার চটি পত্রিকাও বাদ যাবে না।
আমি হাসলাম কেন সেটা বলি।
তার আগে আরও দু’একটা কথা বলা দরকার।
গত বেশ কয়েকদিন আমাকে ইনবক্সে বেশ কয়েকজন জানতে চেয়েছেন, তারা আমেরিকায় ফিরলে এয়ারপোর্টে তাদের ঢুকতে অসুবিধে হবে কি না? এদের কেউ কেউ গ্রীনকার্ড হোল্ডার আবার অনেকেই অন্য ভিন্ন ভিন্ন ভিসাধারী।
আজ নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার একজন রিপোর্টারও এসছিলেন আমার অফিসে- ইমিগ্রেশনসহ ট্রাম্প-কালিন আমেরিকার অবস্থা কোন দিকে যাবে বা বাংলাদেশীদের কি কি সমস্যা হতে পারে।
গতকাল বিকেলে আমার অফিসে আসলেন আমার বন্ধু রিভস।
রিভসের পুরো নাম এটর্ণী জন রিভস। ৬ ফুটের উপর লম্বা হোয়াইট এই ভদ্রলোকের পার্সোনালিটি আমাকে আকৃষ্ট করে। এমনিতে সে বেশ গম্ভীর কিন্তু আমার সামনে আসলে শিশুর মতো সরলতা ঝড়ে পরে তার আচরণে।
রিভস আসলেই- প্রথমে সে বলবে, চলো তোমাদের পেনট্রিতে যাই স্টারবার্ক এর কফি খাবো। ১.৬৫ ডলারে এক গ্লাস কফি সত্যিই বেশ তৃপ্তি দেয়। আমার অফিসের পেনট্রিটা দারুণ।
রিভসের সংগে কফি খেতে খেতে অনেক আড্ডা হলো।
অনেক গল্প করলাম।
এক ফাঁকে এটর্ণি জন রিভস আমাকে হঠাৎই প্রশ্ন করলো- ‘আমেরিকার কি কি পরিবর্তন হতে পারে ট্রাম্পের জমানায়!’
আমি উচ্চস্বরে হেসে দিয়ে বললাম, ‘তুমি একজন আইনের পন্ডিত। আর জানতে চাচ্ছ আমার কাছে? বিষয়টা কি হাস্যকর নয়? আমি তো আমেরিকায় মাত্র দুই বছর। কিছুই তো জানি না এখনও।’
রিভস খুব সুন্দর একটা উত্তর দিয়ে আমাকে বিমোহিত করলো মুহুর্তেই, ‘তুমি ব্যবসায়ী। আবার তুমি আইন নিয়েও কাজ করছো এবং তোমাকে যদ্দুর চিনেছি- আমার মনে হলো তুমিই ভালো বলতে পারবে আমার চেয়ে।’
আসলে হোয়াইটদের আমি এজন্যই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি।
এরা প্রতিটি মানুষকেই ‘মানুষ’ মনে করে।
নিজেকে পন্ডিত ভেবে বসে থাকে না।
অন্যকে সম্মান দিতে জানে এবং বিনিময়ে নিজেও সম্মানিত হয়।
অনেক গল্প করে এবং কিছু জরুরী কাজ শেষ করে রাতে বিদায় নিল এটর্ণী জন রিভস।
যাই হোক।
এবার কয়েকটা কথা বলবো।
আমাদের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখনই- যখন আমরা নতুন কিছু দেখি।
দীর্ঘকাল আমি বাংলাদেশে বসবাস করেছি। আমার অস্তিত্ব, আমার কার্যক্রম, আমার অতি চেনা-জানা পরিবেশ তো বাংলাদেশই।
নতু্ন কিছু হজম করতে আমারও সময় লাগে।
আমার কৌতুহল বেশী, তাই আমি বেশী জানার চেষ্টা করি।
এ কথাটা আমি আগেও আমার অন্য লেখায় বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছি যে, আমেরিকার গণতন্ত্র আমাদের চিন্তার মতো না।
আমেরিকা দেশটা মূল নাম ‘ইউনাইটেড ষ্টেটস’।
নামটাতেই দেশটাকে অতি সহজে চেনা যায়।
আমাদের প্রতিবেশী ভারতও কিন্তু একটা যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলা হয় না কারণ ভারতের ভেতরের রাষ্ট্র বা রাজ্যগুলি মোটেও তেমন একটা স্বাধীনতা ভোগ করে না।
আসলে আমেরিকার মতো ‘উন্নত’ এবং ‘অনন্য’ গণতন্ত্র এই পৃথিবী তন্ন তন্ন করেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আমি নিউ ইয়র্ক ষ্টেটে বসবাস করি।
আমেরিকায় মোট ৫০টি ষ্টেট রয়েছে।
মূল ভূখন্ডে বা মেইন ল্যান্ড এ রয়েছে ৪৮টি ষ্টেট।
মেইন ল্যান্ড থেকে সামন্য বিচ্ছিন্ন আলাস্কা ষ্টেটটি।
এবং আমেরিকা ও জাপানের ঠিক মধ্যখানে রয়েছে হাওয়াই ষ্টেটটি যা প্যাসিফিক এর কিছু দ্বীপ নিয়ে গঠিত।
এর বাইরে আমেরিকার রয়েছে বেশ কয়েকটি ‘ট্রাষ্ট টেরিটরি’।
পুয়ের্ত রিকো, ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড পরেছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে বা ওয়েষ্ট ইন্ডিজের মধ্যে।
এবং মজার বিষয় হলো, অনেকেই যেটা জানেন না- আমাদের এই এশিয়ার মধ্যেই আমেরিকার একটা ‘ট্রাষ্ট টেরিটরি’ রয়েছে যেটা ফিলিপিন্সের খুব কাছে নাম ‘গুয়াম’।
গুয়ামের খুব কাছেই বড় একটা অঞ্চল যেটাও পরেছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যা মেরিনার আইল্যান্ড বা মাইক্রোনেশিয়া নামে পরিচিত এবং এর রাজধানী দ্বীপ হলো ‘সাইপেন’; এই পুরো অঞ্চলটাও আমেরিকার অংশ। অঞ্চলটা অনুন্নত।
নিউ ইয়র্ক এর কথা বলি।
নিউ ইয়র্ক একটি বলতে গেলে সম্পূর্ণ স্বাধীন ষ্টেট।
সত্যি করে যদি বলি তাহলে বলতে হবে- আমেরিকার প্রতিটি ষ্টেটই সম্পূর্ণ স্বাধীন।
কতটুকু স্বাধীন শুনবেন?
আমেরিকার কেন্দ্রিয় সরকার যেটা ‘ফেডারেল গভর্ণমেন্ট’ নামে পরিচিত- ষ্টেটগুলি তার নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়।
এটাই আমেরিকা।
যদি প্রেসিডেন্ট এর নির্দেশ না মানে তাহলে প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ ‘বার্ষিক ফেডারেল অনুদান’ বন্ধ করে দিতে পারবে- এরচে বেশী কিছু করার ক্ষমতা নেই বললেই চলে।
আর ঐ ফেডারেল অনুদান নিয়ে ষ্টেটগুলি আদৌ চিন্তিত নয়। তাদের যা রয়েছে- তা দিয়ে খুব ভালোভাবেই চলে যায়।
ফেডারেল এর দরকার পরে না।
ফেডারেল গভার্ণমেন্ট মুলতঃ কেন্দ্রিয় রিজার্ভ ব্যাংক, ফরেন পলিসি, ইমিগ্রেশন, জাতিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দেখে। এবং দেখে ফেডারেল আইন ও আদালত।
ষ্টেটগুলি এতটা স্বাধীন কেন?
উত্তরটা খুবই সহজ।
আমেরিকা একটা গণতান্ত্রিক দেশ।
আসলে আপনাকে আগে বুঝতে হবে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটির অর্থ কি?
বাংলাদেশের মানুষ ‘গণতন্ত্র’ শব্দটির মানেই জানে না বা শিখেনি।
আমি আবারও বলছি, বাংলাদেশের মানুষ ‘গণতন্ত্র’ মানেই জানে না।
এন্ডো কুমো নিউ ইয়র্কের গভর্ণর।
এন্ডো কুমো জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত গভর্ণর।
নিউ ইয়র্কের রাজধানী আলবেনী।
আলবেনীতে রয়েছে নিউ ইয়র্কের পার্লামেন্ট।
সেখানে রয়েছে নিউ ইয়র্ক এর বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি।
এবং ঐ আলবেনী থেকেই পুরো নিউ ইয়র্ক পরিচালিত হয়।
আমি যে নিউ ইয়র্ক সিটিতে থাকি- সেটা আলবেনী থেকে প্রায় দেড়শত মাইল।
এবং এই নিউ ইয়র্ক সিটি-ই হলো আমেরিকার সবচে বড় শহর; রাজধানী আলবেনী নয় কিন্তু। এই নিউ ইয়র্ক সিটি অল্প কিছুদিন আমেরিকার রাজধানীও ছিল।
৯৩২টি টাউন এবং ৬২টি সিটি নিয়ে নিউ ইয়র্ক ষ্টেট গঠিত।
এই প্রতিটি টাউন এবং প্রতিটি সিটিতে আবার রয়েছে নিজস্ব নির্বাচিত সরকার।
ঐ প্রতিটি টাউন এবং প্রতিটি সিটিও সম্পূর্ণ স্বাধীন।
নিউ ইয়র্ক গভর্ণর কোন সিটির সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করা ক্ষমতা রাখে না।
প্রতিটি সিটি কর্তৃপক্ষের রয়েছে নিজস্ব সিটি পুলিশ।
নিউ ইয়র্ক সিটির পুলিশ আর নিউ ইয়র্ক পুলিশ কর্তৃপক্ষ এক নয়।
নিউ ইয়র্ক সিটির আদালত আলাদা এবং স্বতন্ত্র।
নিউ ইয়র্ক সিটির আইন ও বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিউ ইয়র্ক এর নিজস্ব নিয়মের চলে।
৫০টি ষ্টেটের ৩১টি ষ্টেট এ মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় বাকী গুলিতে মৃত্যুদন্ড দেবার আইন নেই।
৩৭টা ষ্টেট এ আত্মহত্যা করা যাবে না।
৬টি ষ্টেটে আত্মহত্যা (স্বেচ্ছা মৃত্যু) করা যাবে।
নেভাদা এবং ফ্লোরিডাতে প্রস্টিটিউশন এর আইন রয়েছে বা ঐ দু’টি ষ্টেটে প্রস্টিটিউশন চলতে সমস্যা নেই।
নিউ ইয়র্ক সহ বাকী ষ্টেটগুলিতে ‘প্রস্টিটিউশন ‘ ইলিগ্যাল।
অমুসলিম নিউ ইয়র্কে কোন প্রস্টিটিউশন নেই কিন্তু আপনাদের মুসলিম বাংলাদেশে অনেক প্রস্টিটিউশন রয়েছে।
আমি লিখতে থাকলে এসব শেষ হবে না।
নিউ ইয়র্ক ষ্টেটে কোন পুলিশ বা আদালত- কোন ব্যক্তিকে তার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস জানতে চাইতে পারবে না। এমনকি কোন ব্যক্তি যদি সাজাপ্রাপ্ত আসামীও হয়- সাজা শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে এবং তার তথ্য ফেডারেল গভর্ণমেন্টকে দেয়াও হবে না।
নিউ ইয়র্কের হাডসন নদী পার হলেই নিউ জার্সী।
ঐ নিউ জার্সীতে গেলে ওখানকার পুলিশ আপনাকে যে-কোন সময় আপনার ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস জানতে চাইতে পারবে এবং ইলিগ্যাল হলে বা আনডকুমেন্টড হলে গ্রেফতার করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এর কাছে হস্তান্তর করবে।
নিউ জার্সীর আইনটা ওরকমই।
কারণ নিউ জার্সীও স্বাধীন ষ্টেট এবং তার আইন-কানুন সবই আলাদা।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার কোন ষ্টেটে কিছুই না।
স্বস্ব ষ্টেটগুলিতে স্বস্ব আইন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিগণই সবকিছু দেখভাল করে।
এমনকি আমেরিকায় কেন্দ্রিয়ভাবে কোন নির্বাচন কমিশনও নেই।
প্রতিটি ষ্টেটে ষ্টেট আইন অনুযায়ী নিজস্ব নির্বাচনী কর্মকর্তারাই নির্বাচন পরিচালনা করে এবং সেই নির্বাচনেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হতে হয়।
এখন আমাকে প্রশ্ন করেন- প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘লিভ টুগেদার’ বন্ধ করার কে?
তার ক্ষমতা কোথায়? কোন ষ্টেট এ সে লিভ টুগেদার বন্ধ করতে যাবে- কে তাকে পাত্তা দেবে? সে তো কোন ষ্টেটেরই নির্বাচিত প্রতিনিধি না।
না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কোন ষ্টেট এ তার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা রাখেন না।
এটাই আমেরিকা। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য।
দিনাজপুরের ছেলে ডিসি হয়ে সিলেট এর প্রশাসন চালাতে পারবে না যদি গণতন্ত্র হয়।
এবার আসুন ‘ইমিগ্রেশন সমস্যা’ নিয়ে।
মনে রাখবেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট দেশ পরিচালনা করেন আইন এর মধ্যে থেকে।
এবং সেই আইন তৈরী হয় নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান দ্বারা।
কংগ্রেসে বর্তমানে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
কিন্তু প্রত্যেক রিপাবলিকানই ওখানে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এদেশের স্বাভাবিক চর্চা। তাতে কারো সদস্যপদ চলে যায় না কারণ সে নির্বাচিত হয়েছে সরাসরি জনগণ কর্তৃক।
কংগ্রেসম্যানরা যে আইন করে দেবে- প্রেসিডেন্ট সেই আইনের বাইরে যেতে পারবেন না।
আমেরিকার ইমিগ্রেশন সমস্যার কিভাবে সমাধান হবে- সে সিদ্ধান্ত নিবে ‘নির্বাচিত কংগ্রেসম্যারা’। ডোনাল্ড ট্রাম্প নন।
হ্যা। রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে প্রেসিডেন্ট ডিক্রি জারী করতে পারবেন। যেমনটা করেছেন ক্ষমতা হাতে পেয়েই। কিন্তু যে-কোন ষ্টেট এর ফেডারেল কোর্টও ঐ ডিক্রী স্টপ করে দেবার ক্ষমতা রাখে- কারণ ডিক্রী কোন আইন না।
হ্যা। ডোনান্ড ট্রাম্প একটা ক্ষমতা রাখেন।
তার হাতেই রয়েছে পারমানবিক বোমার পাসওয়ার্ডটি।
তিনি এই পৃথিবীর যে-কোন পয়েন্টে পারমানবিক বোমার হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখেন।
তবে, সিআইএ বা পেন্টগণের অফিসাররা ঘাস খান না।
সিনেট প্রেসিডেন্টকে ইমপিচম্যান্ট করতে পারে।
এমনকি প্রয়োজনে ভাইস প্রেসিডেন্ট চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারেন প্রেসিডেন্ট এর পাগলামী।
আমেরিকায় স্বৈরাচার হবার কোন সুযোগ নেই।