নিউ ইয়র্কে প্রচন্ড শীত যাচ্ছে।
গতকাল স্নোও পরেছে তবে স্নো-টা ছিল অনেকটা গুরি গুরি বৃষ্টির মতো।
রাতে বাসায় ফেরার পথে ‘যথেষ্ঠ গরম কাপড়’ সংগে না থাকায় একটু বেশীই শীতে কাবু হয়ে পরেছিলাম।
যাই হোক, সাবওয়েতে বসে ফেসবুকিং করতে তো আর কোন সমস্যা হয় না। তো, ঐ ফেসবুকিং এর সময়ই দেখলাম শেখ হাসিনা তার বাবার ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে এক গবেষনা নির্ভর বক্তব্য দিলেন।
পাকিস্তান সৃষ্টিতে শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ছিল।
বাংলাদেশ সৃষ্টিতেও তার বিশাল অবদান।
আমার হাতে যদি ক্ষমতা থাকতো- বর্তমান বিশ্বের সবচে নোংরা আর অসভ্য মহিলা নির্বাচিত করার তাহলে ‘শেখ হাসিনাকে মানব ইতিহাসের সবচে সস্তা ও অসভ্য মহিলা’ মনোনীত করতাম।
অবৈধভাবে শুধু সে ক্ষমতাই দখলে রাখেনি- গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হত্যা করেছে। প্রতিদিন বিরোধী মতকে গুম, খুন, ক্রস-ফায়ারে দিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ করেছে এবং নিজে যাচ্ছে তাই ঘোষনা করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনার অসভ্যতার শেষ সীমারেখায় পৌছে গিয়েছে।
তবুও বাঙালী জাতির সৌভাগ্য যে ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে সেই ইংরেজদের সংগে যুদ্ধে শেখ মুজিবের অবদানের কথা এখনও শুনতে হয়নি।
আরও কিছুদিন শেখ হাসিনাকে সময় দিন- সেটাও শুনতে পারবেন ইনশাল্লাহ।
গেল বছর ১৫ই আগষ্ট এই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ তাদের ফেসবুকের অফিসিয়াল পেইজে শেখ মুজিবকে ‘প্রফেট অব বেঙ্গল’ বা বাংলার নবী হিসাবে ঘোষনা করেছে।
কিছু দিনের মধ্যে হয়তো জানতে পারবো ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী সালাম বরকত রফিক জাব্বারদের সংশে শেখ মুজিবও শহীদ হয়েছিল।
শেখ হাসিনার পক্ষে সবই বলা সম্ভব।
শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের অনেকের কাছেই ‘জাতির পিতা’ (এটা আবার সংবিধিবদ্ধ)। অনেকেই তাকে অত্যন্ত সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে রেখেছেন।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে ওনার নেতৃত্ব অবশ্যই সর্ব্বোচ্চ যদিও ৭ই মার্চের পর থেকে শেখ মুজিবের আচরণ, কর্মকান্ড, ২৫শে মার্চ পলায়ন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯মাস পাক-হানাদারবাহিনীর কাছ থেকে ১৫০০ রুপি মাসিক ভাতা গ্রহণ তাকে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে নিয়ে যায়।
কিন্তু আমার কাছে ওনার ক্ষমতায় থাকা-কালীন সময়টুকুই বেশী গুরত্বপূর্ণ যা ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। আমি একজন মানুষের সফলতা বা ব্যর্থতা পর্যালোচনা করি তার ক্ষমতাকালীন সময়টুকু দিয়ে।
শেখ মুজিব একজন ধুরন্ধর ক্ষমতালোভী, অসৎ, নোংরা স্বভাবের এবং বড়মাপের চোর ও খুনী। গণতন্ত্র হত্যাকারী। মানবতা ধ্বংশকারী। বিরোধী মতকে সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না তার। এবং ফাইনালী একটা অপদার্ধ ও ব্যর্থ প্রশাসক।
বর্তমান ছাত্রলীগ এর সদস্যরা শেখ মুজিবের ‘আদর্শের সন্তান’ বলে দাবীদার। আমরা ছাত্রলীগের কর্মকান্ডে শেখ মুজিবকে খুঁজে পাই।
এবার একটা কৌতুক বলি- কি বলেন?
এক বৃদ্ধ ডাকাত। মৃত্যুপথযাত্রী। সারাটা জীবন ব্যয় করেছে চুরি-ডাকাতি এবং প্রতিবাদকারীকে হত্যা করে।
এমন একজন লোক মারা যাচ্ছে। তিনি চিন্তায় অস্থির মারা যাবার পর কেউ তো তাকে ‘ভাল’ বলবে না।
এমনই দুঃশ্চিন্তা নিয়ে সে তার পুত্র-কন্যাদের কাছে ডাকলো। ‘বাবারা, দেখ আমি তো শিগগিরই মারা যাচ্ছি। সারাজীবন তো শুধু চুরি-ডাকাতি আর খুনই করেছি। কেউ তো আমাকে ভাল বলবে না। কিন্তু লোকে যা-ই বলুন না কেন, তোমরা তো জান যে আমি এই সবই করেছি শুধুই তোমাদের সুখের জন্য। সুতরাং আমি মারা যাবার পর তোমরা এমন কিছু করবে- যেন সকলে আমাকে ভাল বলে।’
এসব বলে লোকটি মারা গেল।
সন্তানরা পরলো বিপদে।
তারা বাবাকে অনেক ভালো বাসতো।
বাবার শেষ কথা তো রাখতেই হবে। কি করা যায়?
অবশেষে তারা একটা বুদ্ধিও বের করে ফেলল। যা বুদ্ধি তাই কাজ। তারা ছেলে মেয়েরা মিলে মিশনে নেমে পরলো।
এবার তারা শুধুমাত্র চুরি-ডাকাতি-খুনই করে না। সংগে ধর্ষন এবং ডাকাতি শেষে কাউকে না কাউকে গুম এবং বাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে যায়।
এবং, অবশেষে লোকজন বলতে লাগলো, ‘হায়রে ওর বাবাই তো ভালো ছিল। শুধু চুরি-ডাকাতি করতো। কিন্তু এখন তো ওদের সন্তানরা চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষন শেষে বাড়ীতে আগুনও লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে! ওদের বাবা-ই আসলে ভালো মানুষ ছিল।’
লোকজন বাধ্য হলো বাবাকে ভালো বলতে।
এবার আসুন বাস্তবতায়। বাস্তবতা অবলম্বনে একটা কল্পকাহিনী বলি।
লেখাটা নীচে পড়ুুন।
তার আগে বলে নিই।
এই লেখাটা আমার পেইজ ওয়েক আপ বাংলাদেশে ৬৭ হাজার লাইক পেয়েছিল। লাইকের বন্যা দেখে আমি রীতিমত হতভম্ব!
১৯৭৫ সালের জুলাই মাস।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বারের বাড়ী।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রেসিডেন্ট এর বাসভবন; তিনি কিছুদিন প্রধানমন্ত্রী থাকেন আবার মন চাইলেই সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট হন। একবার আওয়ামী লীগ গড়েন, পরে আবার তা বিলুপ্ত করে এবার করেছেন বাকশাল।
প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে রাতের খাবার শেষ করে তার স্ত্রী, ছেলে মেয়েদের নিজ বেড রুমে ডাকলেন। তিনি তার সকল ছেলে-মেয়েদের শান্ত এবং ধীর-স্থির থেকে তার কথাগুলি শোনার জন্য অনুরোধ করলেন।
‘শোন বাবারা। আমার তো অনেক বয়স হয়েছে। তোমাদেরকে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া প্রয়োজন।
তোমরা জানো আমি খুব চমৎকার প্রাঞ্জল ভাষায় কথা বলতে পারি। মানুষ তার খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে মন্ত্র-মুগ্ধের মতো আমার কথা শুনে, আর হাত-তালি দেয়। এই দুঃভিক্ষের মধ্যে ৭ কোটি মানুষ আমার ভাষণ খেয়েই বেঁচে আছে। আমি অনেক ভেবে চিন্তে দেখলাম- এটাই আমার একমাত্র যোগ্যতা।
এই একটি যোগ্যতা দিয়েই আমি শুধুমাত্র তোমাদের আব্বা হওয়া সত্বেও সাড়ে সাত কোটি আবালেরও বাবা হয়ে বসে রয়েছি। এতে তোমরা মনে কোন কষ্ট নিও না। তোমরা তো জানোই যে আমার সব কিছুর একমাত্র উত্তরাধিকার শুধু তোমরাই।
আবালেরা শুধু ‘বাবা বাবা’ করে চিৎকারই করতে পারবে- আমার কাছ থেকে একটা চুলও নিতে পারবে না। আমি আমার জীবদ্শায়ই তোমাদের নামেই করোতোয়া নামের লাল রঙয়ের গণভবনটি লিখে দিয়ে যাবো। তোমরা নিশ্চিন্তে থাকো। সারা জীবন আমার পরিবারই এই আবালদের উপর রাজত্ব করবে। তোমরা তো জানোই- ঐ মতিয়া আর ইনু ছাড়া আমার বিরুদ্ধে চিল্লাফাল্লা করার মতো আর কেউ নেই এদেশে। যারা আছে- তোফায়েলকে বলে দিয়েছি খতম করে দিতে; ওর রক্ষীবাহিনী খুবই একটিভ।
তবে যাই হোক, কিছু বড় বড় ভুল তো হয়েই গেছে।
গত বছর যে দুঃভিক্ষটা হয়ে গেলো তাতে আমার উপর মানুষ প্রচন্ড ক্ষীপ্ত। এতোগুলি কম্বল হাত-সাফাই করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমি তো জানি যে, সত্যি বলতে আমি মানুষকে শুধু ভাষণ শুনিয়েই খুশী রেখেছি- বাস্তবে কিছুই করিনি।
তাছাড়া, যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘শুধুমাত্র গণতন্ত্র’ নামক এক মুলা ঝুলিয়ে আবাল বাঙালীকে দিয়ে যুদ্ধ করিয়ে দেশ স্বাধীন করালাম; সেই গণতন্ত্র আমি নিজেই খেয়ে দিয়েছি। দেশে গণতন্ত্র নেই, ৪টা বাদে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছি। টেলিভিষন, রেডিও তো আমার কথাই বলে; ওখানে কোন সমস্যা নেই।
এখন আওয়ামী লীগও সাটডাউন করে দিয়ে- বাকশাল বানিয়েছি শুধুমাত্র তোমাদের কথা ভেবেই।
দেখছো না উত্তর কোরিয়ায় একটিই মাত্র দল। চায়নাতেও একদল কিন্তু সেখানে দলের মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র। কিন্তু উত্তর কোরিয়ায় একদল চলছে উত্তরাধিকার সূত্রে। সুতরাং আমি উত্তর কোরিয়াকেই ফলো করবো- শুধুমাত্র তোমাদের কথা ভেবে।
এতে অবশ্য মানুষ আরও ক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু আমার তো অন্য কোন সলিউশন নেই। সবার আগে তোমরাই তো আমার সবচে প্রিয়।
দেশটা এখনও আমার আয়েত্বেই রয়েছে। তোমাদের টেনশনের কোন কারণ নেই।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও সমস্যা একটা রয়েছে।’
শেখ কামাল বলে উঠলো, ‘এরপর আবার কি সমস্যা আব্বা হুজুর?’
প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বললেন, ‘দেখ বাবারা, সবাই তো আর আবাল না। তাছাড়া আবাল-রাও যে একসময় বুদ্ধিমান হয়ে যাবে না- সেই গ্যারান্টি তো কেউ দিতে পারে না। এজন্যই আমি তোমাদের সবাইকে ডেকেছি কিছু কথা বলার জন্য।’
মহামান্য প্রেসিডেন্ট বলতে থাকলেন, ‘আমি জানি, ফাইনালী বাংলাদেশের মানুষ আমাকে ঘৃণা করবে। আমার মৃত্যুতে কেউ জানাজাও পড়বে না। অনেকে হয়তো মিষ্টিও খাবে- উল্লাস করবে। আমি তো আবাল বাঙালীর পালস জানি। সুতরাং তোমাদের কাছে আমার একটি আর্জি। তোমরা কথা দাও, আমার কাছে আজকে দেয়া কথা তোমরা মেনে চলবে?’।
এবার বড় কন্যা শেখ হাসিনা সকলের পক্ষে বলে উঠলেন, ‘জ্বী আব্বা হুজুর। আপনি নির্দেশ দেন- আমাদের কি করতে হবে? আমার জীবন দিয়ে হলেও তা করবো। আপনার কথার অমর্যাদা আমরা করবো না আব্বা-হুজুর।’
শেখ মুজিব বললেন, ‘তোমরা এমন কোন কাজ করবে- যেন মানুষ আমাকে ভাল বলতে বাধ্য হয়। এটাই তোমাদের কাছে আমার শেষ অনুরোধ। মানুষ যেন আমার প্রশংসা করে।’
অতপরঃ ছেলে-মেয়েরা পারিবারিক সংগীত গেয়ে শেখ মুজিবের কাছে শপথ বাক্য পাঠ করলো।
যাই হোক, তার একমাস পর আগষ্ট মাসের ১৫ তারিখ শেখ মুজিব কলেরায় আক্রান্ত হয়ে স্বপরিবারে মারা গেলেন।
এবং সারা দেশের মানুষ তার মৃত্যুতে সন্তোষ প্রকাশ করলো, হাফ ছেড়ে বাঁচলো এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার’ ফেরত পেল।
কিন্তু সৌভাগ্য, ঐ কলেরা’র সময় বড় কন্যা শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গেলেন। এবং শেখ হাসিনার উপরই দায়িত্ব বর্তালো পিতার কথা পালন করার।
এরপর ২০১৪ সালে ভারতের সহযোগীতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীত্ব (যা মূলত ভারতের পূর্ববংগ রাজ্যের ‘গোপালগঞ্জ সরকার’ এর মূখ্যমন্ত্রী নামেই পরিচিত) দখল করলেন।
এবং শুধুমাত্র পিতার কথা রাখতে, পিতার যাবতীয় স্বপ্নদোষ কার্যকর কতে তিনি এবার কাজ শুরু করলেন।
তিনি তার গৃহপালিত ‘গোপালী পুলিশ’ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা শুরু করলেন। দেশের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের ফাঁসিতে ঝুলালেন। একসময়ের শান্তির সুন্দর দেশ বাংলাদেশে আইএস, জংগী আমদানী করে বিদেশীদের হত্যা শুরু করলেন যেন ওরা ভয়ে চলে যায়, দেশে আবারও একটু দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় (ঠিক ১৯৭৪ সালের অনুকুলে); মুসলমানদের দেশে মুসলমানদের বঞ্চিত করে হিন্দু দাদাদের হাতে প্রশাসনের সর্বময় ক্ষমতা অর্পন করলেন।
শেখ হাসিনা তার সমালোচক সব টেলিভিষন চ্যানেল আর পত্রিকগুলি বন্ধ করে দিলেন এবং বাকী সংবাদকর্মীদের ‘তোষামদী ইনজেকশন; দিয়ে মোসাহেব বানিয়ে গৃহপালীত কুকরের (মোজাম্মেল বাবু-মন্নি সাহাগং) মতো লালন-পালন করতে লাগলেন- যেন এরা দিনের মধ্যে ২৩ ঘন্টা শেখ হাসিনার গুন-কির্তন করে এবং বাকী ১ ঘন্টা বিজ্ঞাপন দেখায়।
এবং শেষটায় ভারতীয় সৈন্যদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানালেন কথিত এবং তার আমন্ত্রিত জংগি থেকে দেশকে রক্ষা করার নাম করে।
এবং প্রকৃতির নিয়মে এক সময় আবারও কলেরা হয়েই শেখ হাসিনা স্বপরিবারে … করলেন। (… … …)।
এবার বাংলাদেশের জনগণ বলতে লাগলো,
‘ইস শেখ মুজিব-ই কত ভাল ছিল। সে ভারতীয় সেনাদের বাংলাদেশ থেকে বিদায় করে দিয়েছে প্রথম দিনই। কিছু কম্বলই না হয় চুরি করেছে; না হয় দুঃভিক্ষই দিয়েছে- তারপরও তো নিজেদের স্বাধীন দেশটা ছিল! শেখ মুজিব কতই না ভাল ছিল। আর এখন আমরা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত হলাম(!)?’
এভাবে দেশব্যাপী শেখ মুজিবের গুনগান প্রচার হতে লাগলো।
একজন তো একটা গানই লিখে ফেললো:
যদি রাত পোহালে শোনা যেত …
বঙ্গবন্ধু মরে নাই …